জেরিন তাসনিম আলীর শুরুটা অনেকটা গল্পের মতো। শিক্ষা জীবনে দারুণ মেধাবী। এসএসসি এইচএসসিতে ইর্ষণীয় ভালো ফলাফল। পড়াশোনায় ভালো হলেও চাকরি নয় স্বপ্ন বুনেন উদ্যোক্তা হবেন। সেই স্বপ্নের বীজ বুনেছিলেন অনেকটা কৈশোর পেরুনো তারুণ্যে।
পড়তে চেয়েছিলেন ফ্যাশন ডিজাইনিং। কিন্তু তাকে পড়তে হয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং। তবে স্বপ্ন থেকে তিনি কখনো বিচ্যুত হননি। ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিলেও জেরিন এখন চট্টগ্রামের পোশাক শিল্পে একজন ক্ষুদ্র সফল উদ্যোক্তা। গড়েছেন নিজের ব্র্যান্ড ‘লিউইজ’ (Lewiz)। নিজের কারখানায় তৈরি করেন লাখ টাকা দামের নারী ও পুরুষদের ওয়েডিং ড্রেস। তার পোশাকের চাহিদা দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও। ২০১৪ সালে একেবারে শূন্য থেকে শুরু করে জেরিন উদ্যোক্তা হিসেবে পেয়েছেন আশাতীত সাফল্য।
জেরিনের জন্ম চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠিত পরিবারে। বাবা জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ আলী নগরীর আগ্রাবাদ হাজী মোহাম্মদ আলী বাড়ির বনেদি পরিবারের সন্তান এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। মা ফাতেমা শাহীন আলী। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় জেরিন।
রাইজিংবিডিকে জেরিন তাসনিম আলি বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার আর্ট এবং সৃজনশীল কাজের প্রতি অনেক বেশি আগ্রহ ছিল। আমার মায়ের একটা ছোট্ট বুটিক ছিল। সেই বুটিক দেখে নিজে ডিজাইনার হওয়ার একটা আগ্রহ অনেক বেশি কাজ করছিল মনের মধ্যে। এইচএসসি পাস করার পর ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়তে চাইলেও পরিবারের ইচ্ছায় ভর্তি হতে হলো ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। কিন্তু ডিজাইনার হওয়া এবং নিজে একজন উদ্যোক্তা হওয়ার তীব্র ইচ্ছা কখনো মন থেকে মুছেনি। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পড়তেই আমি ক্ষুদ্র প্রচেষ্ঠায় শুরু করি বুটিক হাউজ ‘লিউইজ’। এই ক্ষেত্রে বাবা মায়ের উৎসাহ ছিল কিন্তু তারা চেয়েছেন আমি যাই করি না কেনো পড়ালেখাটা যেন ঠিকমতো করি।
তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পড়তেই নিজেকে তৈরি করেছেন একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে। গড়ে তুলেছেন নিজের কারখানা। দক্ষ কারিগরের একটি বড় টিম। তার কারখানায় তৈরি হয় ব্রাইডাল গাউন, ছেলেদের পাঞ্জাবি, শেরওয়ানি, সব ধরনের ওয়েডিং ড্রেস, পার্টি ড্রেস, মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের আউটফিট।
জেরিন জানান, তার নিজের ডিজাইন করা এবং নিজের কারখানায় তৈরি হওয়া একেকটি ওয়েডিং ড্রেস বিক্রি হয় ১ লাখ টাকা থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। তবে তিনি সর্বনিম্ন ৩৫ হাজারেও ব্রাইডাল ড্রেস তৈরি করে দিতে পারেন। এ ছাড়া, ৩৫০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা দামের পার্টিড্রেস তৈরি হয় জেরিনের কারখানায়। তার ডিজাইন করা ড্রেস বিক্রি হয় দুবাই, ইউএসএ, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
তিনি বলেন, আমি শুরু করেছি একেবারে শূন্য থেকে। প্রাথমিক আমার কোনো পুঁজি ছিল না। বাবা মায়ের কাছে চাইলেই পাওয়া যেতো কিন্তু আমি চেয়েছি নিজে নিজেই করবো। ২০১৪ সালে একজন পরিচিত কারিগরের মাধ্যমে ছোট ছোট অর্ডারে কাজ করতে করতে আমি কয়েক মাসেই ৫০ হাজার টাকা আয় করি। সেই টাকা দিয়েই শুরু করি বড় পরিসরে। গত ৮ বছরে লিউইজ এখন চট্টগ্রামের ওয়েডিং ড্রেসের জন্য একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। এই ব্র্যান্ড এখন তৈরি করে লাখ টাকা দামের পোশাক।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত জেরিন তাসনিম আলী। স্বামী শাহরিয়ার জামি একজন ব্যবসায়ী। জেরিন চট্টগ্রামের বেসরকারী ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি থেকে ইইই বিভাগে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। উদ্যোক্তা জীবনের শুরুতে যেমন বাবা-মায়ের উৎসাহ পেয়েছেন, বিয়ের পর স্বামী শাহরিয়ার জামি তাকে সর্বক্ষেত্রে সহায়তা করেন, উৎসাহ দেন বলে জানান জেরিন।
আগামী দিনে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে আরও বড় জায়গায় দেখতে চান জেরিন। নিজের সৃজনশীলতা, সৃষ্টিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে লিউইজ ব্র্যান্ডকে বড় কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।